বাংলাদেশের চিরাচরিত গ্রামীণ সমাজ কাঠামোর একটি অন্যতম রূপ হচ্ছে সংঘবদ্ধ থাকা। পরিবার প্রথা ভিত্তিক গোষ্ঠীতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার মূল শক্তি হচ্ছে সম্মিলিত উদ্যোগ, সামাজিক বন্ধন এবং সমষ্টিগত উন্নয়ন। গ্রামীণ দারিদ্র্য দূরীকরণে সমবায় দর্শন বেশ টেকসই এবং কার্যকরী হাতিয়ার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও বিচ্ছিন্নভাবে সমবায় ব্যবস্থা প্রায় শতাধিক বছর যাবৎ গ্রামীণ দারিদ্র্য লাঘবে ইতিবাচক অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে তিন-স্তর বিশিষ্ট সমবায় বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ভিন্ন ভিন্ন পেশার ভিত্তিতে সংঘবদ্ধ করে সমবায়ের মাধ্যমে এগিয়ে চলার পথ দেখায়। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষক সমবায়, জেলে সমবায়, তাঁতী সমবায়সহ নানা ধরনের পেশাভিত্তিক সমবায় সংগঠন গড়ে উঠে। এই সকল সমবায় সংগঠন বা সমিতি সফল ও স্থাযী হতে হলে অবশ্যই কিছু নিয়ম-নীতি মানা আবশ্যক।
সফল ও টেসকই সমবায় সমিতির প্রস্তাবনাঃ
১। সমিতির সুনাম, জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্যতা ও সামাজিক কর্মকান্ড অপরিহার্য ।
২। সমিতির নিজস্ব শ্লোগান, সমিতির সাইনবোর্ড, সীল মোহর, লোগো, সদস্যদের আইডি কার্ড, সমবায় পতাকা, জাতীয় পতাকা থাকিতে হইবে।
৩। সমিতির সদস্য সংখ্যা সর্বনিম্ন ৫০ জন, তবে কাম্য হলো ৮০ জন। যদি মধ্যবর্তী সময়ে নতুন কোন সদ্য নিবন্ধিত হতে চায় তাহলে চালু হওয়ার পর থেকে যে কয়েক মাস অতিবাহিত হয়েছে তাহার সম্পূর্ণ চাদা দিয়ে ভর্তি হইতে পারিবে। তবে, সমিতির সঞ্চয় যদি পূর্বে ব্যবসায়িক কাজে চলমান থাকে তাহলে পূর্বের মুনাফা তিনি পাইবেন না। ভর্তি হওয়ার পরের মাস থেকে তিনি (নতুন সদস্য) মুনাফার অংশ পাইবেন।
৪। প্রত্যেক সদস্যকে প্রতি মাসের ১ (এক) থেকে ১২ (বার) তারিখের মধ্যে ২৫০০ (দুই হাজার পাঁচ শত) টাকা সঞ্চয় ফান্ডে জমা দিতে হবে। ১২ তারিখ থেকে পরবর্তী মাস পর্যন্ত সময় ক্ষেপন করলে ১০০ টাকা বিলম্ব ফি হিসাবে পরবর্তী মাসের সাথে যোগ করে সঞ্চয় ফান্ডে জমা দিতে হবে। ১ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত একা ধারে কোন সদস্য সঞ্চয় দিতে অক্ষম হলে তার সদস্য পদ বাতিল বলে গণ্য হইবে।
৫। বাতিলকৃত সদস্যের সঞ্চয়কৃত টাকা সমিতির মেয়াদ দুই বছর শেষ হলে লভ্যাংশ ব্যতীত আসল প্রদান করা হবে। মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন সদস্য সঞ্চয়কৃত টাকা উত্তোলন করার জন্য কোন প্রকার সামাজিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিবে না।
৬। সমিতিতে কমিটির দুটি স্তর ভাগ থাকিবে।
(i) সাধারণ কমিটি (ii) প্রশাসনিক কমিটি
(i) সাধারণ কমিটি: সকল সদস্যগণ সাধারণ কমিটির আয়ত্বভূক্ত থাকিবেন। তাহারা প্রশাসনিক কমিটিকে সমিতির পরিচালনায় সাহায্য করিবেন এবং নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহন ও বাস্তবায়নে অংশ গ্রহন করিবেন।
(ii) প্রশাসনিক কমিটি: কমিটি সমিতির প্রশাসনিক কার্যাদি পরিচালনা করিবেন। তাহারা সাধারণ কমিটির ভোটে নির্বাচিত হইবেন। প্রশাসনিক সদস্য নিম্নরূপ-
i. সভাপতি ii. সহ-সভাপতি iii. সাধারণ সম্পাদক iv. সহঃ সাধারণ সম্পাদক v. কোষাধ্যক্ষ vi. সহঃ কোষাধ্যক্ষ
vii. পরিদর্শক viii. সহঃ পরিদর্শক ix. দপ্তর সম্পাদক x. প্রচার সম্পাদক
৭। সকল সদস্য পরিদর্শকের নিকট স্বচ্ছতা, সত্যতা ও ন্যায় পরায়ণতার জন্য জবাব দিহিতায় বাধ্য থাকিবেন।
৮। সমিতির মোট তিনটি বিভাগে ভাগ করিতে হইবে এবং প্রতিটি আলাদা আলাদাভাবে পরিচালিত হবে।
(i) সঞ্চয়ী ফান্ড (ii) বিণিয়োগ ফান্ড (ii) লভ্যাংশ ফান্ড
৯। সমিতির সদস্য পদ লাভের জন্য নিজস্ব ফরমে আবেদনপূর্বক ভর্তি হতে হবে এবং ফরম বাবদ ১০০ টাকা পরিশোধ করিতে হইবে। ফরম বাবদ আদায়কৃত টাকা সমিতির প্রয়োজনে ব্যয় করা হইবে এবং অবশিষ্ট অর্থ রিজার্ভ ফান্ডে জমা হইবে।
১০। সমিতির মূল ভিত্তি হইলো লাভ-ক্ষতির সম-বন্টন, অর্থাৎ লাভ-ক্ষতির সম-অংশিদার হইতে হবে ।
১১। সমিতির সকল ফান্ডের অর্থ সুরক্ষিত রাখার জন্য সকলের সম্মাতিক্রমে ব্যাংকে “চলতি হিসাব’ খুলে জমা রাখিতে হইবে।
১২। কোন সদস্য সমিতিতে একাধিক সদস্যপদ রাখতে পারবেন না।
১৩। সমিতির যে কোন প্রয়োজনে পরিচালনা কমিটি যদি সাধারণ সদস্যদেরকে আহব্বান করেন, তাহলে প্রত্যেক সদস্যের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।